বই পরিচিতি
এই বইয়ের রচনা গল্প আর প্রবন্ধের মিশেলে তৈরি হয়েছে। লেখায় উঠে এসেছে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনদর্শন, নাগরিক পুঁজিবাদী সমাজের প্রতি অনাস্থা ও ফেলে আসা দিনের প্রতি নস্টালজিয়া। দেশের চলমান সমাজব্যবস্থার প্রতি লেখকের অতৃপ্তি আর অন্তর্গত ক্ষোভ চোখে পড়ার মত। বিশেষত, সমাজের নানাবিধ অসংগতি, কর্পোরেট চাটুকারিতা, নগরায়নে ঢেকে যাওয়া জীবন, মুঠোফোনবন্দী মানুষ, ইত্যাদি তার বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে সংযত ও নান্দনিক উচ্চারণে।
লেখার ক্ষেত্রে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট গল্পকে কেন্দ্র করে লেখার চাইতে বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সুতোয় বাধার প্রবণতা বইটিতে বেশি দেখা যায়। তার লেখাতে কল্পনার চেয়ে অভিজ্ঞতা ও বস্তবতার প্রাধান্য বেশি বলে পাঠক সহজেই বিষয়বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন।
লেখক রানা পাঠককে এই চলমান সমাজব্যবস্থায় নিজের অবস্থান ও দায়িত্বকে পূনর্বার ভেবে দেখবার অবকাশ দেন। অন্যভাবে বলতে গেলে তিনি পাঠককে এমন একটি দর্পনের সামনে নিয়ে আসেন যেখানে পাঠক তার জীবনের অসংগতিগুলো নিয়ে ভাববার অবসর পায়। বস্তুত, ইডিয়টের আত্মকথা পাঠান্তে আমাদের প্রত্যেকেরই আত্মকথা হয়ে ওঠে।
বইটির ‘শুভেচ্ছা-কথা’য় প্রফেসর ইমেরিটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন :
‘হীরক রানার লেখাগুলো গল্পের মতো। একটানা পড়া যায়। লেখকের নিজস্ব একটা স্টাইল আছে, যা মৌলিক ও নতুন। তার সব লেখার ভেতরেই গল্প পাওয়া যাবে, যদিও ‘ইডিয়টের আত্মকথা’ গল্পের বই নয়। এ বইতে গভীর কথা আছে, কিন্তু বলা হয়েছে হালকাভাবে, যে কাজটা মোটেই সহজ নয়।
তিনি আরও লিখেছেন, অনেক কথা বলেছে সে, অল্পকথায় এবং কথা না-বাড়িয়ে। বইটি পড়লে আনন্দ পাওয়া যাবে, যেমন আমি পেয়েছি। এবং ভাবতেও হবে, যেমন আমাকে ভাবতে হয়েছে। লেখককে আমার অভিনন্দন’।